প্রকাশিত: Sat, Jul 8, 2023 9:57 AM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 7:08 AM

ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি

আহসান হাবিব : [১] ষড়যন্ত্র রাজনীতির অংশ বটে, কিন্তু সেই যুগ গত হয়েছে যা দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা যায়। কদাচ দখল করা গেলেও তা টেকে না। কারণ ষড়যন্ত্র এবং গণতন্ত্র এক ঘাটে জল খায় না। তবে ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না, চলতে থাকে। গণতন্ত্রে রাজনীতি হতে হয় দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এখানে মুখ্য নীতি ও আদর্শ যা ইশতেহারে ঘোষণা দিতে হয় এবং এর স্বপক্ষে কর্মসূচি দিতে হয়। জনগণের সামনে দাঁড়াতে হয়। কেউ যদি এসব না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়, অচিরেই সে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। কারণ রাজনীতি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ নীতি।

[২] স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। আগেও ছিলো, বরং খুব বেশি ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ ছিলো গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এখানে লুকোছাপা কিংবা ষড়যন্ত্রের কোনো স্থান ছিলো না। দাবি ছিলো পরিষ্কার, ঘোষণা ছিলো স্পষ্ট এবং সেই লক্ষে কর্মসূচি ছিলো প্রকাশ্য। জনগণ সেই দাবির সপক্ষে একজোট হয়েছে এবং একপর্যায়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এই যুদ্ধ কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলো না। কিন্তু ষড়যন্ত্র ছিলো স্বাধীনতাকে রুখে দেবার। ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। দলের ভেতরে আন্তঃলড়াই এবং ষড়যন্ত্র ভিন্ন জিনিস। নেতৃত্ব দখলের সংগ্রাম পার্টির গতিশীলতার অংশ। এখানে ষড়যন্ত্র করে নেতৃত্ব দখল পরিণামে কাজে আসে না। পার্টি দুর্বল হয়ে পড়ে। নেতৃত্ব নির্বাচন হতে হবে প্রকাশ্য, ভোটের মাধ্যমে। দলের সমস্ত কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে রাত নয়, দিনের মতো পরিষ্কার থাকতে হবে। এটাই আধুনিক গণতান্ত্রিক যুগে একটা পার্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত বলে মনে করি।

[৩] আমাদের দেশ আধুনিক যুগে ঢুকেও ঢুকতে পারেনি। পিছিয়ে গেছে। এর পরতে পরতে এখন পশ্চাৎপদতা। চিন্তা এবং কাজ আধুনিক নয়, সেকেলে। সেকেলে বলেই রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র ঢুকে পড়েছে। এটা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধীত্ব। এই দুর্বলতার সুযোগে আন্তর্জাতিক নানা গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। ষড়যন্ত্রের থাবা বিছিয়ে চলেছে। এই চক্রান্তে বাংলাদেশ ভূ-রাজনীতির ক্রীড়নক হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রটিকে নিয়ে খেলছে। এই খেলায় রাজনীতিতে ব্যর্থ লোকদের তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অস্থিতিশীল করার অবিরাম চেষ্টা অব্যাহত আছে। ফলে রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের মতামতের বাইরে ভিন্ন শক্তির দ্বারা নির্ণীত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক কিংবা নিরাপদ করতে তাই ক্ষমতাসীন যারাই হচ্ছে, তাদের ওই শক্তিগুলোর কাছে অবনত থাকতে হচ্ছে। কারণ একটাই-নিজেদের মেরুদণ্ডহীনতা, জনগণের সামনে দাঁড়াবার ভয়। এই সমস্ত অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক আধুনিক শক্তি। এই শক্তি বাংলাদেশে নাই, বরং তাদের মেরুদণ্ড ভাঙা। ফলে নানা চক্রান্তের ঘূর্ণাবর্তে দেশ ঘুরছে। মনে রাখতে হবে দুর্বল অংশ দিয়ে নানা অবাঞ্ছিত বস্তু ঢুকে পড়ে।

[৪] সামনে নির্বাচন, তাই রাজনীতির নামে নানা অপশক্তি মাঠে নেমে পড়েছে। কে জানে, দেশ এখনো যতটুকু পথে আছে সেখান থেকে ছিটকে পড়ে কি না। তা দেখার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা। আমরা শুধু বলতে চাই, ষড়যন্ত্র নিপাত যাক। রাজনীতি হোক প্রকাশ্য এবং সুনির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শভিত্তিক। লেখক: ঔপন্যাসিক